ঢাকা , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হলে বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব

ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় : ১০-০১-২০২৫ ১২:০৩:০০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১০-০১-২০২৫ ১২:৩৮:৩০ অপরাহ্ন
অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ হলে বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
ভর্তুকিনির্ভর বিদ্যুৎ খাতের লোকসান নিয়ন্ত্রণে রাখতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে বরং এ খাতের অযাচিত ব্যয় ও অপচয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। জ্বালানি আমদানি ও নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানি আমদানিসহ যাবতীয় ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা হলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে। ভর্তুকির পরিমাণ ও বিদ্যুতের দামও কমানো সম্ভব হবে। সনদপ্রাপ্ত এনার্জি অডিটর দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অডিট করানো হলে কেন্দ্রের দক্ষতা বাড়ানোরও সুযোগ আছে। সম্প্রতি অনেক দরদাতার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের জ্বালানি তেল কেনায় প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।

ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ সংস্থা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছে বিদ্যুতের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে। তারা অযাচিত ব্যয় ও অপচয়, অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা হয় এমন উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার তা আমলে নেয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে ভর্তুকি সমন্বয় করলে জনঅসন্তোষ বাড়বে বলে সরকার এখন সে পথে যেতে চায় না। সম্প্রতি আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে এসে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য বাড়ানোর পরামর্শ দিলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। জানা গেছে, অন্য যেসব ব্যয় রয়েছে, তা কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খরচ কে কতটা কমাতে পারছে তার ভিত্তিতে এখন থেকে সংস্থা বা কোম্পানিগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

জ্বালানিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম গত রবিবার রাতে বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতের ব্যয় কমাতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) দায়িত্ব দিতে হবে। যাদের পয়সায় এ খাত চলে সেই ভোক্তা এবং বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য অংশীজন নিয়ে বিইআরসি একটি কমিটি গঠন করে দিলে তারাই দেখিয়ে দেবে কীভাবে কোন খাতে অযাচিত ব্যয় ও অপচয় কমানো যায়। আমলাদের কথামতো চিঠি চালাচালি করে খরচ কমানো সম্ভব নয়।’ একসময় গণশুনানির মাধ্যমে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির একক এখতিয়ার ছিল বিইআরসির। আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালে আইন পরিবর্তন করে নির্বাহী আদেশে খেয়াল-খুশিমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করলে দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে আবার বিইআরসি তাদের ক্ষমতা ফিরে পায়।

শামসুল আলম বলেন, ‘ভোক্তা তথা সাধারণ মানুষের টাকায় বিদ্যুৎ বিভাগ চলে। ভোক্তারাই মূল স্টেকহোল্ডার। অথচ বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে ও এ খাতের ব্যয় কমানোর ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নেই।’ তিনি বলেন, “সরকারি প্রতিষ্ঠান কস্ট প্রাইসে চলবে। যৌক্তিক ব্যয় সাধারণ মানুষ রীতিসিদ্ধ উপায়ে বহন করবে। কিন্তু সরকারি কোম্পানিগুলোকে ‘লাভজনক’ করতে গিয়ে বিগত সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতি বেড়েছে। কর্মকর্তারা সরকারি বেতন স্কেলের বাইরে সিটিং অ্যালাউন্স, গাড়ি প্রভৃতি সুবিধা ভোগ করছে। এ জাতীয় মানুষের কারণেই বিদ্যুৎ খাত তথা দেশের এ দুর্দশা। অলিগার্ক, লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে বিদ্যুৎ খাত চলছে।’

সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব দপ্তরের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বৈঠকে বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় সংকোচন, প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে জ্বালানি ক্রয় এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে বলা হয়, বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ও শিল্পে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। তারপরও লাভ হয়নি। ফলে খরচ কমানোর দিকেই মনোযোগী হতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটে খরচ কমানোর পরিকল্পনা দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। বিলাসিতা এড়িয়ে গ্রাহক সেবা বাড়ানো ও গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি দুর্নীতি কমানোর উপায় বের করতে বলা হয়।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ যৌক্তিক ও সহনীয় মূল্যে মানুষের কাছে নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এ সরকারের মূল উদ্দেশ্য। বিদ্যুৎ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও সরকার কোনো লাভ পাচ্ছে না। বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সমন্বয় করা হলে কোনো কোম্পানিই লাভজনক অবস্থায় থাকবে না। লাভ পাওয়া না গেলে কোম্পানি গঠনের কোনো সার্থকতা নেই। সরকারের আর্থিক সংকট মোকাবিলা করতে কোম্পানিগুলোকে লাভজনক হতে হবে।’

খরচ এবং অপচয় কমাতে ব্যয় সংকোচনের কর্মপরিকল্পনা দাখিল করার নির্দেশ দেওয়ার পর গত মঙ্গলবার বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে।

রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) প্রকৌশলী মো. সেলিম ভূঁইয়া বলেন, ‘রাজস্ব খাতে ১০ কোটি এবং উন্নয়ন খাতে ৬৬ কোটিসহ মোট ৭৬ কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় না করা ও উন্মুক্ত দরপত্রে কেনাকাটা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সাশ্রয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে নতুন গাড়ি না কিনে পুরনো গাড়ি মেরামত করে চালানো, জ্বালানি সাশ্রয়, আসবাবপত্র কেনা, আপ্যায়ন, ভ্রমণ ব্যয় এসব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী আচরণ করা হবে।’  বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ১৯টি প্রতিষ্ঠানে কয়েক হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার্য জ্বালানি বিশেষ করে কয়লা কেনায় অনেক ঠিকাদারের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক দর নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কয়লার আন্তর্জাতিক মানসম্মত মানদ- তৈরিরও উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে। তরল জ্বালানির ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বাংলাস্কুপ/ডেস্ক/এনআইএন

সূত্র: দেশ রুপান্তর


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ